শেপ মেমোরি বলতে বোঝায় কোন বিকৃতময় অবস্থা থেকে পুনরায় প্রাথমিক নির্দিষ্ট আকারে ফিরে আসার সক্ষমতা বোঝায়।বিভিন্ন বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাবে কোন বস্তু তার নিজস্ব আকার হারিয়ে একটি অস্থায়ী আকৃতি ধারণ করলেও পুনরায় সেটি তার প্রাথমিক আকারে ফিরে আসতে পারে।এই রূপ প্রথম কোন পদার্থ আবিষ্কৃত ১৯৬০ সালে ,যার নাম শেপ মেমোরি ধাতব সংকর ।শেপ মেমোরি পলিমার নিয়ে প্রথম বিস্তারিত গবেষণা শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে। তবে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহার হয় জাপানে ১৯৮৪ তে। শেপ মেমোরি ধাতব সংকর ও শেপ মেমোরি পলিমারের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে,যেকারনে টেক্সটাইল পোশাকে শেপ মেমোরি পলিমারকে ব্যাবহার করা গেলেও শেপ মেমোরি ধাতব সংকরকে করা যায় না । যেমন ধাতব সংকরের প্রসারণ ক্ষমতা মাত্র ৮% ,সেখানে ইউরাথেন পলিমারের ১০-২০০% পর্যন্ত হতে পারে।
ছবিঃ শেপ মেমোরি পলিমারের তাপমাত্রা নির্ভরশীলতা |
এ গুণগুলোর জন্যই শেপ মেমোরি পলিমার আজকের আধুনিক সব পদার্থের মধ্যে একটি।
কিভাবে শেপ মেমোরি কাজ করে ?
শেপ মেমোরি ক্ষমতা তাপ,আলো,বিদ্যুৎ ও অন্যান্য উত্তেজক পরিবর্তনে বৃদ্ধি পেতে পারে।শেপ মেমোরি পলিমার গঠনগতভাবে দুই ধরণের অংশে বিভক্ত
থাকে একটি হল সুসজ্জিত ঈষৎ
নরম অংশ,অপরটি কঠিন অগোছালো অংশ।এ দু অংশ পরস্পরের সাথে ঘনিস্টভাবে জোড়া লেগে তাদের
সুক্ষাতিসুক্ষ পর্যায়েও ভিন্নতা প্রদর্শন
করে।এই স্ফটিকাকার কঠিন অগোছালো অংশটিই পদার্থের কাঠিন্যের
জন্য দায়ী আর নরম নিরাকার অংশ স্থিতিস্থাপকতা সৃষ্টি করে পদার্থটির আকার আকৃতি বজায়
রাখে।উল্লেখ্য এ নরম অংশটির গ্লাস ট্রাঞ্জিশন(Tg) তাপমাত্রা সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রার
নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
স্থিতিস্থাপকতার ব্যাপারে আরও আলোচনার আগে আমাদের অবশ্যই জানা উচিৎ স্থিতিস্থাপক
মডুলাস কি। সব বস্তুরই নির্দিষ্টএকটি স্টিতিস্থাপক
মডুলাস থাকে। স্থিতিস্থাপক মডুলাস একটি নাম্বার
বা মান,যা ঐ পদার্থের আকার
পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা কে প্রকাশ করে। যেকোন পদার্থের
ধর্মের উপড় স্ট্রেস-স্ত্রেইন
বক্র রেখা প্রকাশ করলে সে রেখাটি স্থিতিস্থাপক
পরিবর্তন বা স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পদার্থটির বিকৃতির পরিমান বুঝিয়ে দেবে।স্বাভাবিকভাবেই সে সকল পদার্থ শক্ত
তার স্থিতিস্থাপক মডুলাসের মান বড়।
স্থিতিস্থাপক মডুলাস=চাপ/ বিকৃতি
এখন আসা যাক Tg তাপমাত্রা ও স্থিতিস্থাপকতার উপড় এর প্রভাব সম্পর্কিত
আলোচনায় কোন পলিমারের তাপমাত্রা যখন Tg তাপমাত্রার
উপড়ে থাকে তখন সেটি রাবারের মত দশায়
উপনীত হয়, সহজেই বিকৃত হতে পারে এবং পূর্বের আকারে ফিরেও আসতে পারে। কিন্তু যখন পদার্থটিকে Tg তাপমাত্রার নিচে নিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা করা হবে
তখন সে পদার্থটি যে অবস্থায় ছিল সেরকম আকারেই থেকে যাবে।সে অবস্থা থেকে পুনরায়
আগের আকারে ফিরে আসতে তাকে অবশ্যই Tg তাপমাত্রার
উপড়ে পুনরায় তাপ প্রয়োগ করতে হবে।নির্দিষ্টভাবে বললে Tg তাপমাত্রার ১০-২০
ডিগ্রি সেলসিয়াস উপড়ে নিয়ে তাপ প্রয়োগ করলেই তা করা
সম্ভব।
তাপ প্রয়োগ ও ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে যেভাবে শেপ মেমোরি পলিমার বিকৃত হয় এবং নির্দিষ্ট আকারে ফিরে আসে |
তাই কোন পলিমারকে তখনই শেপ মেমোরি পলিমার বলা যাবে যখন তার Tg তাপমাত্রার
সাথে তাল মিলিয়ে নিখুত ভাবে কঠিন থেকে রাবার এবং রাবার থেকে কঠিন অবস্থায় পরিবর্তিত হতে পারার ক্ষমতা থাকবে
।
এবং এই পলিমারকে পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করতে হলে
Tg এর মানকে অবশ্যই শরীর ও কক্ষতাপমাত্রার কাছাকাছি হতে হবে।
আকার পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি দিক
(১) স্ফটিকাকার কঠিন এবিং (২) নরম অংশের আনুপাতিক হার।
যেহেতু আমরা আগের আলচনায় জেনেছি কঠিন অংশই মূলত এদের আকার পরিবর্তনের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করে ,তাই দেখা গেছে পলিমারের কঠিন অংশের পরিমাণ যদি ৩০-৪৫%
মত বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে সেটি আকার পরিবর্তী ক্ষমতাকে ৮০-৯৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে
পারে।
প্রবেশযোগ্যতা বা ভেদ্যতাঃ
ব্রাউনীয় গতি সুত্রের থেকে আমরা জানতে পেরেছি যেকোন পদার্থের মধ্যে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু থাকে তা অবিরাম কম্পনরত অবস্থায় থাকে,তাপমাত্রা বাড়লে অণুগুলোর কম্পনের পরিমাণও
বেড়ে যায়।এই কম্পনের পরিমাণ বেড়ে গেলে শেপ মেমোরি পলিমারের
গায়ে যে সুক্ষাতিসুক্ষ পাতলা ঝিল্লি থাকে তাতে সুক্ষ ছিদ্রের সৃষ্টি হয়,এ ছিদ্র গুলোই
কাপড়ের মধ্যে জলীয়বাস্প ঢোকার সুযোগ দেয়। আবার যখন তাপমাত্রা কমে যায় তাতে কম্পন কমে
গিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ,ফলে কাপড়ের জলীয় বাস্প
প্রবেশ্যতা কমে যায়। যখন ছিদ্র বাড়ে
,তখন সে ছিদ্র দিয়ে শরীরের ঘাম জলীয় বাস্প
আকারে বাইরে বেরিয়ে যায় এবং শরীর ঠাণ্ডা করে
দেয়,একই সাথে প্রয়োজনে শীতল পরিবেশে আবার ছিদ্র কমিয়ে দিয়ে
আবার শরীরের তাপ রক্ষা করে।তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে বিচক্ষণতার সাথে
আদ্রতা ব্যবস্থাপনাই শেপ মেমোরি পলিমার
নির্মিত পোশাকের বিশেষত্ব । সেনাবাহিনীদের
যুদ্ধ পোশাকে এই শেপ
মেমোরি পলিমারের ব্যবহার শুরু হয়েছে ।
এছাড়াও অন্য ফেব্রিকের
পোশাকের উপড়ে শেপ মেমোরি পলিমারের আবরণ লেমিনেট করেও ভিন্ন ভিন্ন উপযোগের পোষাক তৈরি
হচ্ছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন