গার্মেন্টস পোশাক তৈরিতে সেলাই একটা আবশ্যক অংশ। টেক্সটাইল
ইন্ডাস্ট্রি বা ফ্যাশন জগতে তাই সেলাই ম্যাশিনের আবিষ্কার ছিল একটি বৈপ্লবিক ঘটনা।সেলাই
ম্যাশিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত মানুষ যেকোন প্রকার সেলাই হাতেই করত।সেলাই ম্যাশিন
আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ফ্যাশন জগতের যেন মোর ঘুরে গেল এবং টেক্সটাইল শিল্প হস্ত
কেন্দ্রিক হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।সেলাই ম্যাশিনের কারনেই এখন সর্বস্তরের
মানুষের সাধারণ প্রত্যাহিক ব্যাবহার্জ্য বস্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।যা আগে
সম্ভব ছিল না।
(Elias
Howe) এলিয়াস হওে’র হাত ধরে সেলাই ম্যাশিনের প্রথম স্বীকৃত
যাত্রা শুরু হলেও এর আগে অনেকবার সেলাই ম্যাশিন আবিষ্কারে মানুষের চেস্টার ইতিহাশ পাওয়া যায় ।১৮২৯ সালে থিমোনিওর(Thimmonier) নামের একজন ফ্রেন্স দরজী চেইন
সেলাই করতে সক্ষম একটি ম্যাশিনের প্যাটেন্ট অর্জন করতে সমর্থ হন কিন্তু
দুর্ভাগ্যবশত তদানীন্তন সংগঠিত সেলাই শ্রমিকদের একটি দাঙ্গায় তার তৈরি সেলাই ম্যাশিনের
সবগুলো মডেল ধংশ হয়ে যায়।পরে ১৮৩২ সালে(Walter Hunt)ওয়াল্টার হান্ট আবার নতুনভাবে সেলাই ম্যাশিন
তৈরি করলেও তার প্যাটেন্ট অর্জন করতে পারেন নি।সবশেষে এলিয়াস হওে ১৮৪৬ এ সম্পূর্ণ
হস্ত-চালিত শক্তিতে চালিত সেলাই ম্যাশিন আবিষ্কার করেন এবং তার আবিষ্কারের
স্বীকৃতি পান।
কিছুদিন আগেও আমাদের বাসা বাড়িতে একটি সিঙ্গার নামটি খুব
সুপরিচিত ছিল, এ নামটির এই ব্যাপ্তির পেছনে যা অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন প্রথম সেলাই
ম্যাশিন তৈরির প্রতিষ্ঠান সিঙ্গারের মালিক ইসাক সিঙ্গার ।তিনিই প্রথম ১৮৫৯ সালে
সেলাই ম্যাশিন তৈরির বৃহদায়তন শিল্প কারখানা স্থাপন করেন।এজন্য তিনি হওের সেলাই ম্যাশিনের
কিছু পরিবর্তন আনেন, হাতে চালনার বদলে সেখানে তিনি একটি পা দানি(ইংরেজিতে ফুট
ট্র্যাডেল)যুক্ত করেন।এতে করে ম্যাশিন চলার মূল শক্তিটি হাতের বদলে পা থেকে আসতে
শুরু করল।ফলে হাত মুক্ত হয়ে যাওয়ায় তা দিয়ে সেলাইয়ের সময় ফেব্রিক কে আরও সহজে ও
সুদৃঢ় ভাবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হল।সিঙ্গার তার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও প্রচারের
লক্ষে বাৎসরিক ১ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।ফলশ্রুতিতে ১৮৬৭ তে
সিঙ্গার কোম্পানি দৈনিক ১০০০ টি ম্যাশিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। ১৯২১ সাল
থেকে এ কোম্পানি বিদ্যুৎচালিত সেলাই ম্যাশিন তৈরি শুরু করে।
হস্তচালিত এলিয়াস হাওয়ের সেলাই ম্যাশিন |
শিল্প বিপ্লবের সময়ের দাবী সময় বাঁচানো ও অধিক উৎপাদনের জন্য
তখনকার প্রায় সব শিল্প কলকারখানার কতৃপক্ষ ইতিহাসে প্রথম বারের মত শ্রমিকদের আবাসন
ব্যাবস্থা আয়োজনের কথা ভাবে।এতে করে তখনকার চাকরি খোজ করা মানুষগুলো সেলাই ম্যাশিন
তৈরির কারখানার আশেপাশের জায়গাগুলোতে ভীর করতে থাকে।১৮৪৯ সালে হটাৎ ক্যালিফোর্নিয়ার
কিছু স্থানের মাটিতে সোনা পাওয়া যেতে শুরু করে।যাকে ইতিহাসে ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড
রাষ নামে অবিহিত করা হয় । এ খবর চারিদিকে চাউর হতেই অ্যামেরিকার অন্যান্য
অঙ্গরাজ্য ও পাশের দেশ থেকে প্রায় তিনলাখের উপড়ে মানুষ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসন
গ্রহণ করে।এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের মধ্য থেকে লেভি স্ট্রাউশ নামের এক ২০ বছরের
বালক সেখানে ড্রাই গোডের(মুদি দোকান) দোকান দেন। দোকানের জন্য তিনি নিজেই ১৮৭৩
সালে ধাতব পিন যুক্ত পকেটের ফুল প্যান্ট তৈরি শুরু করেন।এ প্যান্ট গুলো তৈরিতে
ব্যাবহার হত শক্ত প্রকৃতির তুলার ফেব্রিক যার নাম Serge-D-Nimes যাকে পরবর্তীতে ডেনিম নামে
ডাকা শুরু হয়।খুব তাড়াতাড়ি ডেনিম প্যান্টের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং এর বাণিজ্যিক
উৎপাদন সেলাই ম্যাশিনের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেয়।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৯৬৫) চলাকালীন সময়ে
সেনাদের পরিহিত পোশাক তৈরিতে সেলাই ম্যাশিনের ব্যবহার করা হয় ।আর্ম ফোর্স গুলো তাদের
পোশাক বানানোর আগে অন্তত এক হাজার সৈন্যের বুকের মাপ ও উচ্চতা পরিমাপ করত তারপর সে
মাপ বিশ্লেষণ করে একটি আদর্শ পরিমাপ নির্ধারণ করা হত।যুদ্ধের পর এ পদ্ধতিটি জনসাধারণের
প্রত্যাহিক বস্ত্র তৈরিতে প্রয়োগ করা শুরু হয়।
ফূট ট্র্যাডেলযুক্ত সিঙ্গার সেলাই ম্যাশিন |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন