আবিষ্কারের ইতিকথা |
(অতিথি পোস্ট)
গবেষক এবং লেখক (BDG Entertainment & Media)
বিজ্ঞানের জন্মকথা নিয়ে বির্তকের
শেষ নেই। সত্যি বলতে কি,
মোটামুটি
১৫ বিলিয়ন বছর আগে মহা-বিস্ফোরণের মাধ্যমে আমাদের
এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির সাথে সাথেই বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে। এরপর নানা ধাপে মহাবিশ্বের
বিবর্তন,
আমাদের
গ্যালাক্সির জন্ম,
সৌর
জগতের উদ্ভব অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবী
সৃষ্টি, পৃথিবীতে পানি এবং প্রাণের
আবির্ভাবÑ সবকিছুর নেপথ্যেই রয়েছে
বিজ্ঞান। এই নেপথ্য শক্তিকে বুঝতে এবং ধরতে পারাটাই আসল।
শুনতে অবাক লাগতে পারে মানুষই প্রথম বিজ্ঞানকে করতে শেখেনি। পৃথিবীর প্রথম এককোষী অনুজীবগুলোই প্রথম বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে শেখে। তা না হলে প্রকৃতির সাথে লড়ে তাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না ।
অন্যপ্রাণীরা নিজের অজান্তে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে শিখলেও তার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেনি। আসলে সে চেষ্টা করার মতো বুদ্ধিমত্তা তাদের নেই। মানুষ যখন পাহাড়ের গুহায় বাস করত, তখন থেকেই তারা প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর নেপথ্য কারণ আবিষ্কার করতে শিখেছে। তাই সেই প্রস্তর যুগেই মানুষ আগুনের ব্যবহার; গাছের ছাল ও পশুর চামড়ার সাহায্যে লজ্জা ঢাকা ও শীতের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করা; পাথর ও গাছের ডালের সাহায্যে অস্ত্র তৈরি এবং চাকার ব্যবহার শিখেছে। এপরপর মানব জাতির বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনের সাথে সাথে তাদের আবিষ্কারের নেশাটাও বেড়েছে। সময়ের হাত ধরে একসময় আর্কিমিডিস, অ্যারিস্টাকার্স, টলেমি, অ্যারিস্টোটল, পিথাগোরাস, ইউক্লিডরা পৃথিবীর মানুষকে দেখিয়েছেন আলোক পথের নতুন দিগন্ত।
এর বহুবছর পর মধ্যযুগে কোপার্নিকাস, হাইপোশিয়া, জিয়োর্দানো ব্রুনো, কেপলার, গ্যালিলিওদের বিজ্ঞানচর্চা পৃথিবীকে বদলে দেয় আরেক ধাপ। তাদের অগযাত্রার সেই পথ মসৃণ ছিল না। মানুষের গোড়ামী আর কুসংস্কারের নিষ্ঠুরতা মাঝপথেই কেড়ে নেয় হাইপেশিয়া আর ব্রুনোর জীবন প্রদিপ; গ্যালিলিওর মতো মহামানবকে সরু, অন্ধকার কারাগাারে একপেটা-আধাপেটা খেয়ে না খেয়ে ধুকে ধুকে শেষ জীবন অতিবাহিত করতে হয়। তার পরও বিজ্ঞানের জয়যাত্রা থেমে থাকেনি। গ্যালিলিও পড়ন্ত বস্তুর সূত্র, মহাবিশ্বে^র জন্য মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটা প্রসঙ্গ কাঠামো ও দূরবীন আবিষ্কার করেছিলেন।
যে বছর গ্যালিলিও মৃত্যবরণ করেন, সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। তিনি কোপার্নিকাস, কেপলার ও গ্যালিওর তত্ত্বগুলো গভীরভারে পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর আবিষ্কার করেন মহাকর্ষ সূত্র, সূর্যালোকের বিভাজন সূত্র, পিজম, ক্যালকুলাসহ মৌলিক বিজ্ঞানের বহু আবিষ্কার। তার হাতেই জন্ম হয় আধুনিক পদর্থবিদ্যার। পরবর্তী কালে যেমন আইনস্টাইন, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, নিলস বোর, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস, শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর, শ্রোডিংগার, ডি-ব্রগলি, জর্জ গ্যামোরা তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তেমনি টমাস আলভা এডিসন, চালর্স ব্যাবেজ, লগি বেয়ার্ডরাও প্রযুক্তি বিদ্যাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আকাশ ছোঁয়া স্তরে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা কথা প্রচলিত আছে আদিকাল থেকে বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতটা এগিয়েছে; শুধু বিংশ শতাব্দীতে এগিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কথাটা যে মিথ্যে নয়, গত শতাব্দীতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের মানের পরিবর্তনের দিকে তাকালেই তা বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান, আব্দুল গাফফার রনি, অঙ্কুর প্রকাশনী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন