খাদি কাপড়ের বৈশিষ্ট্য হলো এটি হাতে তৈরি সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়। ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামের নেতা মহাত্মা গান্ধী এই বিশেষ বয়ন পদ্ধতিতে তৈরি সুতি কাপড়কে 'খদ্দর'
নামকরণ করেন। পূর্বে এই কাপড়ের প্রচলন থাকলেও নির্দিষ্ট কোন
নাম ছিল না । এই বুনন পদ্ধতি কেবল সুতির
কাপড়েই সীমাবদ্ধ নয়, রেশম, তসর বা উল প্রভৃতিতেও ব্যাবহৃত হয়। যদিও এর আভিধানিক অর্থ কার্পাস
তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়।
খাঁদি কাপড় দিয়ে যেমন মুসলিনের মত একদম চিকণ প্রকৃতির
কাপড় তৈরি হতে পারে তেমনই অনেক মোটা কাপড় তৈরি করা সম্ভব । কাপড় মোটা হলেও খাঁদি কাপড় দেহের জন্য অনেক
আরামদায়ক। অনেক আরামদায়ক পোশাক হিসেবে খাঁদি
কাপড়ের খ্যাতি রয়েছে ।
তাঁতের কাপড় বোনা মানুষের আদিম কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম । পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে তাঁত বিস্তার লাভ করেছিল । খাঁদি এই তাঁত শিল্পেরই একটি উপকরণ। খাঁদি শুধু হাতে চালিত তাঁত থেকেই নয় বড়ং যে সুতা দিয়ে এই বুননের কাজ হয় সেটিও সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয়। বহুকাল আগে থেকেই ভারতে এই কাপড়ের থাকলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে এটির প্রসার ঘটে। মহাত্মা গান্ধী খাঁদি কাপড়কে জাতীয় আন্দোলনের(অহিংসা আন্দোলন) প্রতিকীরুপে প্রচার করেন। ইংরেজ শাসন আমলে ইংল্যান্ডের ম্যাশিনে তৈরি কাপড়ের উপড় ভারতের মানুষের যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল খাঁদি কাপরের প্রচলনের মধ্য দিয়ে তিনি সেই নির্ভরতাকে দূর করতে চান ।
এটি ছিল একটি অভাবনীয় উদ্যোগ যা সমগ্র ভারতীয়
উপমহাদেশের গ্রাম্য কুটীর শিল্পকে উৎসাহিত করে ও কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয় । সামগ্রিকভাবে
খাঁদিকে কেন্দ্র করে ভারত তাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে অনেক এগিয়ে যায় । খাঁদি কাপড় বোনা এবং পরিধান ভারতের স্বনির্ভরতা
ও রাজনৈতিক মতবাদের প্রতীকী হিসেবে এখনও চিহ্নিত হয়। স্বাধীনতার পরেও খাঁদি ভারতের কর্মসংস্থানের
সক্রিয় ভুমিকা পালন করে চলে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে নবগঠিত
ভারত সরকার খাঁদির প্রচারণার লক্ষে খাঁদি গ্রাম ও খাঁদি শিল্প কমিশন গঠন করে যা
খাঁদি কাপড়ের প্রয়োগ , প্রচারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কাজ করতে থাকে।
তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে খাঁদির তেমন
উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসে নি এবং শুধু
রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেই খাঁদি কাপড়ের প্রচলন টিকে আছে ।
বর্তমানে যখন পরিবেশ দূষণ নিয়ে মানুষের
সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে ,তখন পুনরায় খাঁদির মত প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি কাপড়কে
গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে । যদিও আধুনিক
প্রযুক্তিতে তৈরি কাপড়ের সাথে খাঁদি মূল্য ও মানে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না কিন্তু
এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে যার কারনে অনেকে খাঁদিকে পছন্দ করে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন