সত্তর দশকের শেষভাগে
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু । বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ছিল খুবই
নাজুক অবস্থায়। কৃষি ও পাটশিল্প ছিল একমাত্র আয়ের ভিত্তি। টেক্সটাইল শিল্প রপ্তানিমুখি হওয়ায় সহজেই এটি জাতীয়
অর্থনৈতিক মহলে গুরুত্ব পায়। মাল্টি ফাইবারএগ্রিমেন্ট ও জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড এর মত কিছু চুক্তি যার পালে
হাওয়ার সঞ্চার করে । অত্যন্ত দ্রুততার
সাথে এগিয়ে তিন দশকের ব্যাবধানে এটি হয়ে ওঠে দেশের রপ্তানি আয়ের একটা বিশাল ভাণ্ডার।
প্রতি বছর এর রপ্তানির পরিমাণ
বেড়ে চলেছে প্রায় ১.৯১% হারে। দেশের
সদা টলমলে রাজনৈতিক অবস্থাও যার অগ্রগতিকে এতটুকু খর্ব করতে পারে নি। যদিও সুবিধাজনক শ্রমবাজার বাংলাদেশকে প্রধান
শক্তি যোগাচ্ছে কিন্তু অপর্যাপ্ত ও অগোছালো অবকাঠামো এর সামনে এখন প্রধান বাঁধা। পাকিস্থান ও ভিয়েতনাম এর মত প্রতিযোগী এ দিকদিয়ে
অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে।
স্পিনিং সেক্টরঃ
সূতা ও কাপড় তৈরিতে বাংলাদেশ
অনেক এগিয়ে থাকলেও এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের যোগানে বাংলাদেশের অবদান
শূন্য । সম্পূর্ণভাবে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয় এ শিল্পের যাবতীয় ছোটখাট কাঁচামাল । দেশের অর্জিত
বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ খরচ হয় সেখানেই । টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল ও আনুসাঙ্গিক
যন্ত্রাংশ এবং বিদেশি কিছু তৈরি পোশাক ক্রয় করতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যয় করে ৫.২৭ বিলিয়ন ডলার।
তূলা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পের
প্রধান কাঁচামাল । তাই তূলার মূল্যে উপড় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাজারের উঠানামা
প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তূলার দাম ছিল নিন্মমুখি। অ্যামেরিকার কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-১৫
সময়ে বিশ্বের তূলা উৎপাদনে কিছু অগ্রগতি আসে ।
এস সময়ে পৃথিবীতে মোট ১১৯.৪
মিলিয়ন বেল তূলা উৎপন্ন হয় যার বিপরীতে ব্যাবহার হয় ১১১.৩ মিলিয়ন বেল তূলা। দেখা গেছে প্রতিবছর গড়ে
১.২ মিলিয়ন বেল তূলা সঞ্চিত থেকে যায়। এজন্য তূলার মূল্য খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার
সুযোগ থাকে না।
গত বছর বাংলাদেশের তূলা
আমদানির বৃদ্ধি পায় ৭.৬ %। বৈশ্বিক তূলা
রপ্তানিতে সামনের দিকের দেশ হিসেবে ভারত ও উজবেকিস্থানের অংশ ছিল যথাক্রমে ৩৫% ও
২৫% ।
পলিএস্টার,ভিস্কজ,অ্যাক্রিলিক,সিন্থেটিক,মোডাঅ্যাক্রিলিক
জাতীয় স্টাপল ফাইবারের আমদানি বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত । ডাই রসায়নের আমদানি কর ৫ শতাংশ । তবে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এখানেও কিছু শুল্ক
ছাড়ের ব্যাবস্থা রয়েছে। আমদানি পণ্যে ভ্যাট ও অগ্রসর আয়কর দেয়া
বাধ্যতামূলক ,বাকীটা মৌকুফ করা হয়। তবে আমদানির উপড় বাংলাদেশের কোন কোঁটা সুবিধা
নেই।
পক্ষপাতমূলক বাণিজ্য চুক্তির প্রভাবঃ
বহুল আলোচিত জি এস পি সুবিধা থাকাকালে
রপ্তানিকারি নির্মাতারা শুন্য শুল্ক ব্যাবস্থা ভোগ করত,তবে প্রাথমিকভাবে শুধু
দেশীয় কাঁচামালে উৎপন্ন হওয়া কাপড়ের উপড়ই এই সুবিধা বর্তমান ছিল,পরে তাকে
পরিবর্তিত করে আমদানি নির্ভর তৈরি পোশাক রপ্তানিকেও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের অন্তর্ভুক্ত
করা হয়।
আগের নিয়ম থাকলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প হয়ত কিছু মন্থর গতিতে আগাত কিন্তু একটি শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড
লিঙ্কেজ তৈরি হত, কিন্তু তা না হয়ে
নির্মাতাদের কাছে কাঁচামালের জন্য সরাসরি বিদেশের দরজা খুলে যায় ।একারণেই
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের কোন ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ তৈরি হয় নি।
বলে রাখা দরকার ইউরোপিয়ান
ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও অ্যামেরিকার দুটি পৃথক জি এস পি ব্যাবস্থা রয়েছে। এই ব্যাবস্থার মাধ্যমে অ্যামেরিকা ও ইউরোপীয়
ইউনিয়ন তাদের দেশে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক দেশকে
রপ্তানিকরমুক্ত ব্যাবসার অনুমতি দেয়।
অর্থাৎ সেসব দেশ তাদের কাছে
পন্য বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে সরকার কোন অতিরিক্ত কর নেয় না। তবে বর্তমানে
বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জি এস পি সুবিধা ভোগ করলেও ২০১৩ তে অ্যামেরিকার জি
এস পি ভুক্ত দেশ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়। কারণ হিসেবে
দেখান হয় বাংলাদেশের অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, কর্ম পরিবেশের অভাব ও দুর্বল শ্রমনীতিকে
।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন