আধুনিক রেইনকোটের সংক্ষিপ্তইতিহাস-০১(A Short History of Modern Raincoat Part-01).....................................................................................এর পরে
এর পর আসে ১৮৩৯ সাল, যখন
চার্লজ গুডইয়ার নামের একজন হার্ডওয়্যার ব্যাবসায়ী রাবার ব্যাবহারের পদ্ধতি নিয়ে
গবেষণা করছিলেন। তিনি রাবারকে ভল্কানাইজ করে ব্যাবহার করার চিন্তা করলেন। সাধারণত
সালফার দিয়ে উত্তপ্ত করা রাবারকে ভল্কানাইজড রাবার বলে, এভাবে ভল্কানাইজ করলে
রাবার আরও বেশি স্থিতিস্থাপকতা ও মিশ্রিত অবস্থা ধারণ করে।
চার বছর পরে টমাস হ্যান্ডকক
ম্যাকিন্টোসের প্যাটেন্ট করা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেন এবং ভল্কানাইজ করা রাবার দিয়ে
রেইনকোট তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই ধাপে ধাপে ম্যাকিন্টোসের মুল আবিস্কার উন্নতি
লাভ করতে থাকে। ১৮৪৯ সালে এর সাথে যুক্ত হয় ক্যালেন্ডারিং। নতুন এই রেইনকোট উনবিংশ
শতাব্দীর প্রথমভাগে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আবার কিছু রেইনকোট তৈরি হয়
টুকরো টুকরো অংশকে যুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ পোশাক প্রাপ্তির মাধ্যমে। যাতে গরমে কেউ পোশাকের অপ্রয়োজনীয় অংশ খুলে রাখার
সুবিধা পায় ।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন
সময়ে বিভিন্ন পরিবেশের উপযোগী রেইনকোটের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় টমাস কুর্বেরী
তৈরি করলেন বিখ্যাত ট্রেঞ্চ কোট। ডাইং করা সুতার তৈরি গ্যাবারডিন কাপড় ছিল এই কোট
তৈরির উপাদান। বিস্ময়কর ভাবে তিনি এখানে কোন রাবারের ব্যাবহার করেন নি।
তীশি বীজের তেল দিয়ে পালিশ করে
এই কাপড়ের উপরিতল এমন ভাবে মসৃণ করা হত যে দেখতে অনেকটা চামড়ার মত লাগত। তবে এগুলো
সম্পূর্ণরুপে পানিরোধী ছিল না , নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি পানির স্পর্শে আসলে এই
কাপড়ও সিক্ত অবস্থায় চলে যেত। কিন্তু তা সত্তেও আগের রেইনকোট গুলোর থেকে অনেক
তাপসহায়ক হওয়ায় ১৯১৮-২০ সালের দিকে দ্রুত সাধারনের জনপ্রিয় পোশাকের তালিকায় উঠে
আসে।
ট্রেঞ্চ কোট |
স্টাইলিশ ট্রেঞ্চ কোট |
১৯২০ সালে নতুন ডিজাইনের ট্রেঞ্চ
কোট তৈরি করলে, তেলের প্রক্রিয়াজাত করা এই কাপড় সাধারণ তুলা ও সিল্ক কাপড় থেকেও
বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে ।
১৯৩০ এ মোটর সাইকেল আরোহীর
জন্য কিছু ছোট আকারের ট্রেঞ্চ কোট বাজারে আসে।
১৯৫০ এ পানি প্রতিরোধী পদার্থ
হিসেবে ভিনাইলকে ব্যাবহার করা হল । ভিনাইল প্ল্যাস্টিকের মত হওয়ায় সেটিও খুব বেশি
তাপহায়ক হয়ে উঠতে পারল না। এরপর ব্যাবহার করা হল উল ও সিনথেটিক ফাইবারের ব্লেন্ড।১৯৬০
সালে নাইলন এবং ১৯৭০ সালে আসে ডাবল নিট ফেব্রিক স্ট্রাকচারের রেইন কোট।
তবে ডাবল নিটও মাত্র এক দশকের
মধ্যেই জনপ্রিয়তা হারায়। এর মাঝে অল্প
বয়সী মেয়েদের মধ্যে ভিনাইল রেইনকোট জনপ্রিয় হয়েছিল।
আজকের সময়ে আমরা যে রেইন কোটগুলো
ব্যাবহার করছি সেগুলো তৈরি হচ্ছে অনেক রকম কাপড় থেকে, বিভিন্ন রঙ ও স্টাইলের। এছাড়া গ্যাবারডিন কাপড়ের
যে ট্রেঞ্চ কোট উনিশ শতকের প্রথমে এসেছিল তা এখনও অনেক মানুষের পছন্দের পোশাক।
সোজা কথায় রেইন কোট তৈরির
প্রধান কাঁচামাল হল এমন কাপড় যা পানি রোধ করবে। এখনকার বেশিরভাগ রেইন কোট তৈরি হচ্ছে
তুলা,পলিএস্টার,নাইলন ও রেয়নের মধ্যে ব্লেন্ডিং ঘটিয়ে । এছাড়াও উল,ভিনাইল,মাইক্রোফাইবার অল্প বিস্তর
ব্যাবহার হচ্ছে । অভ্যন্তরীণ ও রাসায়নিক গুলাবলীর বিবেচনায় বিভিন্ন রসায়ন দিয়ে
প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। পানি প্রতিরোধী পদার্থ যেমন রেজিন,পাইরিমিডিন অথবা
মেলামাইন,পলিইউরাথেন,টেফলন,ফ্লুরাইন ইত্যাদি সব পদার্থের সাহায্য নিয়ে আধুনিক রেইন
কোট হয়ে উঠেছে শক্তিশালী পানি রোধী কিন্তু ওজোনে হালকা।
নির্দিষ্টভাবে তুলা,উল ,নাইলন
অথবা কৃত্তিম ফাইবারজাত কাপড়ে রেজিনের প্রলেপ দেয়া হয়। নিন্মমানের তুলার কাপড়কে
প্যারাফিন ইমালশনের সাথে লবন, অ্যালুমিনিয়াম ও জিরকোনিয়ামের বাথে ডোবানো হয়,
অন্যদিকে উচ্চ মানের তুলাকে পাইরিডিয়াম অথবা মেলামাইনের জটিল যৌগ বিশিষ্ট বাথের
মধ্যে রেখে ট্রিটমেন্ট করা হয় । এসব জটিল যৌগ তুলার সাথে একটি স্থায়ী সংযোগ স্থাপন
করছে, যা কোনভাবেই পানিকে ঢুকতে দেয় না ।
তথ্যসূত্রঃ
http://www.madehow.com/
http://www.esimone.ro/
http://wikipedia.com/
http://anikabozic.com/
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন