যখন পরিবেশে তাপ ও আদ্রতা এক সঙ্গে
বিরাজ করে তখন আমরা কি ধরণের পোশাক পরব শুধু সে চিন্তায় সীমাবদ্ধ থাকলেই চলে না
বরং ভাবতে হয় কি ধরণের কাপড় দিয়ে পোশাকটি তৈরি হচ্ছে ।
পলো সার্ট: পলো শার্টের
সাথে আমরা কেউ অপরিচিত নই, ছেলেদের পোশাকের
মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে সাধারণ এটিই । মাল্টিপারপাস এবং ভার্সেটাইল এ পোশাকটির উৎপত্তি ইতিহাস
কিছুটা ধারণা নির্ভর । তবে উনবিংশ শতাব্দী থেকেই এর ব্যাবহার
প্রসার লাভ করে । এই শার্টের জনপ্রিয়তার পেছনে একজন মানুষের অবদান ও চেষ্টার কথা না
বললেই নয় । তিনি হলেন ফ্রেঞ্চ টেনিস লিজেন্ড
রেনে লাকস্ট । পেশায় একজন টেনিস খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও
আধুনিক পলো শার্টের মুল ডিজাইনটি কিন্তু তারই করা ।
১৯৩০ সালের আগে ফুল প্যান্টের
সাথে হাতা গোটান ফুল শার্ট পরে টেনিস প্লেয়ারদের কোর্টে আসত । খেলার ধরণের সাথে অবাস্তবধর্মী এই পোশাক রীতির উপড় সাত বারের গ্র্যান্ড
স্লাম জয়ী লাকস্ট নাখোশ ছিলেন । প্রথমত টেনিস খেলার জন্য একটি বাস্তবধর্মী পোশাক প্রচলন করাই ছিল
তার উদ্দেশ্য । তিনিই প্রথম এ নিয়ম ভঙ্গ করে
মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন । এ লক্ষে নিজে একটি শার্টের ডিজাইন করেন যাতে ছিল ছোট
হাতা ও কলার । পিকে কটন প্রযুক্তির কাপড় দিয়ে তিনি এই শার্ট তৈরি
করেন । এ
কাপড় ছিল একই সাথে মজবুত ও ব্রেথেবল ।
১৯২৬ সালের ইউ এস ওপেনে তিনি এই
পলো শার্ট পরে মাঠে নামলেন এবং এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হলেন । খেলায় সুবিধা
প্রত্যক্ষ করে অন্য খেলোয়াড়রাও তার এই টি শার্টকে গ্রহণ করলেন ।
১৯৩৩ সালে খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর লাকস্ট তার গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী বন্ধু
এন্ড্র গিলিয়ারের সাথে লা-কস্ট টি-শার্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন । এর পরে টেনিস খেলার পোশাকরূপে
পলো শার্ট গ্রহণযোগ্যতা তো পেলই, সাথে
সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠল খুব কমফোর্টেবল একটি পোষাক । আশির দশকে পলো শার্ট
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছায় ।
লিনেন ফুল শার্টঃ
শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার ক্ষমতার
জন্য একটি বিখ্যাত ফেব্রিক লিনেন ।
লিনেন একটি ন্যাচারাল ফেব্রিক
। খুব পাতলা ও ছোট ছোট ছিদ্র যুক্ত হয় হয়
বলে , শরীরে নিয়মিত বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে । সাদা রঙের লিনেন তাই গরমে পরার
জন্য বেস্ট সুইটেড । তবে এতে খুব তাড়াতাড়ি ভাজ পরে বলে প্রতিবার ধোয়ার পরে একে
আইরনিং করা আবশ্যক । লিনেন কে মনে
করা হয় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন
কিছু ফাইবারের একটি ।
হেনলয়েঃ সাধারণ শার্ট থেকে এই টি শার্ট কিছু ভিন্ন প্রকৃতির ।অনেকটা ফতুয়ার মত । এটি
এসেছে স্পোর্টস ম্যান টি শার্ট থেকে যা পরে একুশ শতকের র্যাগড স্টাইলের প্রতীক
হয়ে ওঠে । এ শার্টে কোন কলার থাকে না , গোল গলার সাথে ২-৫ টির মত বোতাম থাকে । ৭০
এর দশকে এই শার্টের জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছায় , তবে সাম্প্রতিক কালের ফ্যাশনে আবারো
এতি ফিরে আসছে , জেমস বন্ড সিরিজের নায়ক ড্যানিয়েল ক্রেগ ও জিরাসিক ওয়ার্ল্ড খ্যাত
ক্রিজ প্র্যাটের গায়ের পরা হেনলে শার্ট সারা বিশ্বের মানুষের নজর কাড়ে ।
কখনো কখনো এমন হতে পারে গরমের
দিনে আপনি হয়ত শুধু টি শার্ট ই পরতে চাচ্ছেন । কিন্তু বরাবর একই রকম টি শার্ট পরলে অড লাগবে এমন ভাবছেন তখন আপনি না হেনলয়ে বেছে নিতে পারেন । শর্ট স্লিভ হেনলি দেখতে অনেকটা সাধারণ টি
শার্টের মত হলেও গলার দিকে এর প্লাক্ট করা বোতাম একে আরও কমফোর্টেবল করে তোলে ।
ঠিক পলো ও হাফ হাতা বোতাম ওয়ালা শার্টের মতই এটি সহজে দেহের সাথে ফিট হয় ।আর ঠিক ঠাক
ফিটিং পরিপাটি চেহারার পূর্বশর্ত ।
ছিনোস প্যান্টঃ যে কাপড় দিয়ে এ প্যান্ট তৈরি হয় তাকে টেক্সটাইলের ভাষায়
টুয়াইল বলে ।বাংলাদেশে যাকে গ্যাবারডিন প্যন্ট নামেই ডাকা হয় । প্রথমত এ প্যান্টের
প্রচলন শুরু হয়েছিল ৫০ এর দশকে একটি মিলিটারি পোশাক হিসেবে । তবে সিভিলিয়ান পোশাক
হিসেবে এটির প্রচলন শুরু হয় যখন ফিলিপাইনে জয়ী হয়ে আমেরিকান সৈন্য দল এই প্যান্ট
পরে বীরদর্পে দেশে ফিরে আসে । বিজয়ী সেনাদের পরনে
থাকা এই প্যান্ট তরুণ ছেলেদের কাছে সম্মান জনক পোশাক রূপে গৃহীত হয় । তখন এই
প্যান্ট শুধু চীনেই তৈরি হত বিধায় এর নাম রাখা হয়েছিল ছিনোস । অ্যামেরিকার সবচেয়ে পুরাতন ছেলেদের পোশাক
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রোক ব্রাদার ১৯৪২ সালে এই প্যান্টকে বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি
করা শুরু করে ।
এই প্যন্ট জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে
আরও একটি পরোক্ষ কারন ছিল । তখনকার সময়ে স্কুলে জিন্স প্যান্ট পরে যাওয়ার অনুমতি
ছিল না । বিধায় জিন্সের বিকল্প হিসেবে ছেলেরা ছিনোস কে গ্রহণ করে । এজন্য স্কুল
পড়ুয়া ছেলেদের মাঝে এর প্রচলন বিস্তার লাভ করে ।
ক্যানভাস স্নিকারের সাথে ম্যাচ
করে পরা ছিনোস খুব মার্জিত ক্যাজুয়াল পোশাক এবং গরমের সময়ে জিন্সের তুলনায় বেশি
আরামদায়ক । এছাড়া বেঞ্চ বা বারে লাঞ্চ করার সময় এটি ঠিক শর্ট প্যান্টের মতই কমফোর্টেবল ফিল দেয়।
শর্ট স্লিভ ফিটিং
শার্টঃ বর্তমানে শর্ট স্লিভ শার্ট বা হাফ হাতা শার্টের ব্যাবহার কম । তবে গরমে
জন্য কিন্তু এই শার্ট টিকে সবচেয়ে উপযুক্ত ধরা হয় । স্লিম ফিট ভিন্টেজ ওয়াশ জিন্সের সাথে বোতাম এটাছ একটি প্ল্যাইন শার্ট
ক্লাসিক স্মার্ট লুক তৈরি করে । যা খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা
করে দেখায় । তবে অল্প বয়সী ছেলেদের জন্য ব্রাইট কালারের স্ট্রাইপ করা শার্ট ভাল
মানায় । অন্যদিকে
মধ্য বয়সীদের জন্য সাদা বা সফট কালারের
শার্ট সুইট করে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন