ফসিল রেকর্ড |
ভূতত্ত্ব
বিদ্যার যাবতীয় আবিষ্কারের পেছনে যে জিনিসটি দায়ী তার নাম ফসিল।জীবদেহের
ধ্বংসাবশেষ হাজার হাজার বছর ধরে পরিবর্তিত হতে হতে ফসিলে রুপ নেয়।মৃত জীব দেহ থেকে
ঠিক কত বছর পর ফসিলে রূপান্তর ঘটে তা বের করার কোন নির্দিষ্ট ধরাবাঁধা নিয়ম
নেই।প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য মোতাবেক ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়।
যাহোক সেই
আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার এই ফসিলগুলো কোথায় থাকে এবং কিভাবে থাকে ?
ফসিল গুলো
থাকে শিলার মধ্যে, যাকে
পাললিক শিলা বলে।এছাড়া অন্য কোন শিলার মধ্যেই ফসিল থাকতে পারে না। এর পেছনেও কিছু কারন রয়েছে যেগুলো এখানে আলোচনার আবশ্যকতা নেই।
জীবদেহের
মৃত্যু থেকে ফসিল তৈরি হতে অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হয়,যেগুলো অত্যন্ত দীর্ঘ।সাধারণত কোন প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে তার নরম অংশ গুলো
পচে বিলীন হয়ে যায় আর বাদবাকি অংশ যেমন হাড়গোর, সেগুলো ফসিলে পরিনত হয়।তবে
বেশীরভাগ ফসিল পাথর,পানির ও নানান রকম প্রাকৃতিক চাপে পিষ্ট হয়ে
ভেঙে বিলীন হয়ে যায়।এজন্যই প্রাণীদেহের ফসিল পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা।কদাচিৎ দু একটি
ক্ষেত্রে মৃত প্রাণী দেহ থেকে ফসিলের রূপান্তর ঘটে, তবে সেগুলোর খুজে
পাওয়াও সহজ কোন কাজ নয়।
আগেই বলেছি
ফসিলের বয়স নির্ধারণে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই,প্রয়োজন অনুধাবন করে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে বহুল
ব্যাবহৃত ও তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিটি হল কার্বন ডেটিং।কার্বন ডেটিং সম্বন্ধে জানতে
আমাদের মৌলিক পদার্থের মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার।
ইলেক্ট্রন,নিউটন ও প্রোটনের সমন্বয়ে কোন মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম
অংশ পরমাণু গড়ে উঠে এবং প্রত্যেক পরমানুর কেন্দ্রস্থলকে নিউক্লিয়াস বলে। এ
নিউক্লিয়াসের মধ্যেই থাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটন কনা।প্রোটন সংখ্যাকে ঐ মৌলের
পারমাণবিক সংখ্যা বলে।মুলত এই সংখাটিই যেকোন মৌলের বিশেষ বিশেষ বৈশিস্ট্যগুলোর
জন্য দায়ী।আর মৌলের ভর সংখ্যা মানে বোঝায় (প্রোটন+নিউট্রনের) মিলিত সংখ্যাকে।
কার্বনের
একটি পরমাণুতে থাকে ৬ টি প্রোটন ও ৬ টি নিউট্রন, দুইয়ে মিলে এর ভর
সংখ্যা দাঁড়ায় ৬+৬=১২।তাই একে কার্বন-১২ ডাকা হয়।সাধারণ বেশীরভাগ কার্বনের
পরমাণুতে সমান সংখ্যক প্রোটন ও নিউট্রন থেকে থাকে।কিন্তু কখনও কখনও মৌলের বিভিন্ন
অস্থিত অবস্থার কারণে নিউট্রনের সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা যায়।এর ফলে তৈরি হয়
কার্বন-১৩ ও কার্বন-১৪ মত ভার্শন গুলো।১৩ ও ১৪ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রোটন সংখ্যা সমান
থাকলেও তাদের নিউট্রনের সংখ্যা যথাক্রমে ৭ ও ৮।সাধারণত কার্বনের এই তিনটি ভার্শনই
উপলভ্য যাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলা হয়।কারন এগুলো খুব অস্থির অবস্থায় থাকে এবং
ধীরে ধীরে ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের নিউক্লিয়াস গঠনে পরিবর্তন এনে অন্য মৌলে
রূপান্তরিত হয়।যে পদ্ধতিতে এই রূপান্তর ঘটে তাকেই তেজস্ক্রিয়তা বা রেডিও
অ্যাক্টিভিটি বা নিউক্লিও বিক্রিয়া বলে।
খাদ্য শৃঙ্খলে C-12 ও C-13 কিভাবে
সঞ্চারিত হয়
|
কার্বন ডেটিং স্কেল |
তাহলে আমরা
জানলাম নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোন মৌলের রূপান্তর ঘটে এবং সেটি অন্য পদার্থে
পরিনত হয়।এখন প্রশ্ন হল নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় কি এমন ব্যাপার ঘটে যাতে কোন মৌল তার
যাবতীয় ধর্ম ভুলে গিয়ে অন্য ধর্ম ধারণ করে নেয়? এই বিক্রিয়ায় মৌলের
অভ্যন্তরস্ত নিউক্লিয়াসের প্রোটন কনা অন্য উৎস থেকে ইলেকট্রন শুষে নিয়ে নিউট্রনে
পরিনত হয় ।এর বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে তাতে নিউট্রন তার ভিতরের ঋণাত্মক চার্জ বের
করে দিয়ে প্রোটন কনায় পরিনত হয়।
এবার মূল
আলোচ্য বিষয়ে আসি,কিভাবে উপড়ের আলোচনাকে কাজে লাগিয়ে কোন
ফসিলের প্রকৃত বয়স নিরুপম করা যায় ?
কোন
আইসোটোপ কতটা অস্থির তা বোঝাতে অস্থিরতার সময়কালকে একক ধরা হয়,যাকে অর্ধায়ু বা হাফ লাইফ ব্যাবহার বলা হয় ।
যেমন -ইউরেনিয়াম -২৩৮ এর অর্ধায়ু ৪’শো কোটি বছর , ইউরেনিয়াম -২৩৫ এর অর্ধায়ু ৭৫ কোটি বছর,কার্বন -১৪ অর্ধায়ু ৫৭৩০ বছর ।অর্থাৎ কার্বন-১৪ কে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে ৫৭৩০ বছর পর এর অর্ধেক অংশ অন্য কোন পদার্থে পরিবর্তিত ক্ষয় হয়ে যাবে।
এই বিশাল অর্ধায়ু সম্পন্ন আইসোটোপ গুলোর সাহায্যে আমরা তেজস্ক্রিয় ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ফসিলের সঠিক বয়স নির্ধারণ করে সাম্প্রতিক কালের ইতিহাস জানা সম্ভব হয় ।
যেমন -ইউরেনিয়াম -২৩৮ এর অর্ধায়ু ৪’শো কোটি বছর , ইউরেনিয়াম -২৩৫ এর অর্ধায়ু ৭৫ কোটি বছর,কার্বন -১৪ অর্ধায়ু ৫৭৩০ বছর ।অর্থাৎ কার্বন-১৪ কে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে ৫৭৩০ বছর পর এর অর্ধেক অংশ অন্য কোন পদার্থে পরিবর্তিত ক্ষয় হয়ে যাবে।
এই বিশাল অর্ধায়ু সম্পন্ন আইসোটোপ গুলোর সাহায্যে আমরা তেজস্ক্রিয় ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ফসিলের সঠিক বয়স নির্ধারণ করে সাম্প্রতিক কালের ইতিহাস জানা সম্ভব হয় ।
উপড়ে
উল্লিখিত কার্বনের তিনটি আইসোটোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কার্বন-১২ কে
তবে
সামান্য হলেও প্রকৃতিতে কার্বন-১৪ অস্তিত্ব রয়েছে যার অর্ধ জীবন ৫৭৩০ বছর। মানে প্রতি ৫৭৩০ বছরে C-14 এর অর্ধাংশ ক্ষয় হয়ে N-14 তে রূপান্তরিত হয় ।
বলে রাখা
দরকার অক্সিজেনের সাথে যে কার্বন যুক্ত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গঠন করে,সে কার্বনের মধ্যে c-12 ও c-14 উভয়ই থাকে। উদ্ভিদ এই CO2 ব্যাবহার করে খাদ্য তৈরি করে ।
প্রাণী খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপড় নির্ভরশীল । এভাবে খাদ্যশৃঙ্খল বা food chain এর মধ্যে C-12 ও C-14 দুইটিই সমানুপাতিক ভাবে সঞ্চারিত হয় ।
কার্বন বায়ুমণ্ডল থেকে উদ্ভিদে ,উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে সঞ্চারিত হতে থাকে এবং এদের অনুপাতও সমান থাকে ।
কিন্তু যখনি কোন প্রাণীর বা উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে তখনি এদের মধ্যে তারতম্যের সুত্রপাত ঘটে কারন মৃত প্রাণী খাদ্দ্য গ্রহণ করে না বিধায় C-14 গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ।
তখন মৃত দেহে বিরাজমান অস্থির C-14 একটি খুব ধীর কিন্তু নির্দিষ্ট হারে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে N-14 তে রূপান্তরিত হতে থাকে ।
প্রাণী খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপড় নির্ভরশীল । এভাবে খাদ্যশৃঙ্খল বা food chain এর মধ্যে C-12 ও C-14 দুইটিই সমানুপাতিক ভাবে সঞ্চারিত হয় ।
কার্বন বায়ুমণ্ডল থেকে উদ্ভিদে ,উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে সঞ্চারিত হতে থাকে এবং এদের অনুপাতও সমান থাকে ।
কিন্তু যখনি কোন প্রাণীর বা উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে তখনি এদের মধ্যে তারতম্যের সুত্রপাত ঘটে কারন মৃত প্রাণী খাদ্দ্য গ্রহণ করে না বিধায় C-14 গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় ।
তখন মৃত দেহে বিরাজমান অস্থির C-14 একটি খুব ধীর কিন্তু নির্দিষ্ট হারে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে N-14 তে রূপান্তরিত হতে থাকে ।
কসমিক
রেডিয়েশন এর ফলে বায়ুমণ্ডলের N-14 থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে C-14 নির্গত হয় ।
C-14 প্রতি ৫৭৩০ বছরে ক্ষয় হয়ে তার অর্ধেকে পরিনত হয় এবং বাকি অর্ধেক N-14 তে রূপান্তরিত হয় ।
ফলে মৃত দেহে নির্দিষ্ট অনুপাত থেকে C-12 এর তুলনায় C-14 এর পরিমাণ কমে যেতে থাকে ।এই কমে যাওয়ার পরিমাণ বা আনুপাতিক হার হিসাব করা হয়।
C-14 প্রতি ৫৭৩০ বছরে ক্ষয় হয়ে তার অর্ধেকে পরিনত হয় এবং বাকি অর্ধেক N-14 তে রূপান্তরিত হয় ।
ফলে মৃত দেহে নির্দিষ্ট অনুপাত থেকে C-12 এর তুলনায় C-14 এর পরিমাণ কমে যেতে থাকে ।এই কমে যাওয়ার পরিমাণ বা আনুপাতিক হার হিসাব করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন