যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর কিন্তু একে ব্যাপক ভাবে বৈদেশিক মুদ্রার উপড় নির্ভর করতে হয় । বৈদেশিক
মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র তৈরি
পোশাক শিল্প । ১৯৮০ সালের পর থেকে এই
শিল্পে প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধি চলমান রয়েছে
। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে মাত্র ৫০ টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
ছিল এখন এর সংখ্যা ৪৪৯০ । যার ৯৫ শতাংশের মালিক
বাংলাদেশি, বাকী ৫ শতাংশ চলে বৈদেশিক বিনিয়োগে ।বর্তমানে জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনীতির ৮১ শতাংশের যোগানদাতা এবং জিডিপি’র
১৩ শতাংশের জন্য দায়ী এই শিল্প ,১৯৯০ এর যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ । প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষ এই সেক্টরে কর্মরত রয়েছে যাদের ৮০ শতাংশ মহিলা । বাংলাদেশের মহিলাদের প্রধান কর্মক্ষেত্রই এই টেক্সটাইল শিল্প । আমেরিকা বাংলাদেশের প্রধান ক্রেতাদেশ । বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৫৬
শতাংশ ক্রেতা ইউরোপিয়ান এবং ৪০ শতাংশ আমেরিকার ।
টেক্সটাইল ব্যাবসায় বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনের দুটি প্রধান কারণের এক মুক্ত বাজার
অর্থনীতি দুই সস্তা শ্রম । ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন
এর এগ্রিমেন্ট অন টেক্সটাইল এ্যান্ড ক্লথিং(ATC), এভ্রিথিং বাট আর্মস (EBA) এবং ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকার মূল্য অবকাশ সহায়তা ইত্যাদি বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ভাবে লাভবান করেছে
।
১৯৭৪ সালে টেক্সটাইল শিল্প বৈশ্বিক ভাবে একটা সাম্য নীতি
গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় যাকে মাল্টি ফাইবার ওরেঞ্জমেন্ট (MFA) নামে অবিহিত করা হয় । এই নীতি দ্বারা আন্তর্জাতিক বাজারের উপড় কিছু সীমারেখা আরোপিত হয় । ১৯৭৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত চলা এই নীতি
রপ্তানিতে বিভিন্ন কোঁটা পদ্ধতি তৈরি করে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে উন্নত দেশে
টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির পথ নিশ্চিত করে । ১৯৭৪ সালে থেকে প্রতি বছর ৬ % বর্ধিশ্নু হারে উন্নয়নশীল দেশ থেকে টেক্সটাইল
পণ্য আমদানির নিয়ম ধার্য করা হয় ।
উন্নয়নশীল বিশ্বে তথা বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল ছিল এক অভূতপূর্ব সুযোগ । বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যা ও
নিন্ম শ্রম মূল্যকে কাজে লাগাতে এই নীতির ভুমিকা ছিল সুরপ্রসারী । ওয়ার্ল্ড ট্রেড
অর্গানাইজেশনের তথ্যানুযায়ী মাল্টি ফাইবার এগ্রিমেন্ট (MFA) ফলে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ ।
কোঁটা সুবিধার কারনে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ
বৃদ্ধি পায় । সবার আগে আসে দক্ষিণ কোরিয়া
। বলা যায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের
উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার । ডাইও(Daewoo) কোম্পানি বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম
, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের দেশ গার্মেন্টস এর
সাথে তারা জয়েন্ট ভেঞ্চারে ব্যাবসা শুরু করে ।এবং দেশ গার্মেন্টসকে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস
শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে ।
এক বছর পরই দেশ গার্মেন্টসের
১৩০ জন সুপারভাইজার ও ম্যানেজারকে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিনামুল্যে তৈরি পোশাকের
প্রোডাকশন ও মার্কেটিং এর উপড়ে প্রশিক্ষন দেয়া হয় । যদিও এই ১৩০ জনের ১১৫ জনই
পরবর্তীতে দেশ গার্মেন্টসের চাকরী ছেড়ে
নিজ মালিকানায় প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানের চাকরী গ্রহণ করে
। সে যাই হোক এই ১৩০ জন প্রশিক্ষিত জনগন বাংলাদেশের
রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্পের সূচনায় এক বিরাট ভুমিকা পালন করেছিল।
মাল্টি ফাইবার ওরেঞ্জমেন্ট (MFA) এর কারনে ইউরোপিয়ান বাজারে
প্রবেশাধিকার বাংলাদেশের উন্নতির
ধারাবাহিকতাকে এককথায় নিশ্চিত করে । ৮০ দশকের মধ্যেই গার্মেন্টস বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি
আয়ের খাত হয়ে ওঠে । চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বন্দর নির্মিত
হয় । ১৯৮১ সালে ৩০০ টি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিকে বেসরকারী মালিকানা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয় ।
৮২ তে
প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতায় আসার পর দেশে নতুন শিল্প নীতি প্রণীত
হয় । কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয় যার মধ্যে সরকারের হাতে থাকা ৩৩ টি জুটমিল
এবং ২৭ টি টেক্সটাইল মিলকে শর্তসাপেক্ষে তার পূর্বের মালিকের হাতে স্থানান্তর করা
হয় এবং বিদেশে রপ্তানির জন্য এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোন(EPZ) তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ-২ (Some Historical Background About Bangladesh RMG-02)
তথ্যসুত্রঃ
http://www.investopedia.com/terms/m/multi-fiber-arrangement.asp
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladeshi_RMG_Sector
http://en.maquilasolidarity.org/issues/trade/MFA
http://rantoshak.blogspot.com/2012/05/impact-and-unforseen-implications-of.html
https://en.wikipedia.org/wiki/Multi_Fibre_Arrangement
https://www.wto.org/english/thewto_e/whatis_e/tif_e/agrm5_e.htm
https://www.wto.org/english/docs_e/legal_e/16-tex_e.htm
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন