স্বাগতম

মোদের গরব, মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা |পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষী মানুষের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই!

পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কিছু কথা (Pabna Textile Engineering College & Some Discussion)


বাংলাদেশ তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে টেক্সটাইল শিক্ষার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ  দীর্ঘ একশ বছরের আয়ুতে এই প্রতিষ্ঠান বহু শিক্ষানবিশের জ্ঞানের চাহিদা পুরন করে আসছে ।  ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারতে  পাবনা সরকারি উইভিং বা বুনন  স্কুল নামে সে যাত্রার সূচনা হয়েছিল । ১৯২৬ সালে বাংলার তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড কার্মাইক্যাল প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন এবং

 ক্ষুদ্র পরিসরের এই স্কুলের প্রশংসা করেন । স্বাধীনতার পর ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার এখানে ২ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ এ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে ডিপ্লোমা  কোর্স চালু করা হয়   টেক্সটাইল শিল্পে ক্রমাগত উন্নতি সত্ত্বেও ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিক্ষায় গ্রাজুয়েশনের জন্য মাত্র একটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল তা হল ঢাকা কলেজ অফ টেক্সটাইল টেকনোলোজি ( বর্তমানে বুটেক্স )  এই শুন্যতা পূরণ করতেই ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার ৪ বছর মেয়াদী বি এস সি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ।

  আঞ্চলিক পরিসর পার করে এই প্রথম প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাতারে সামিল হয় । দেশের সব প্রান্ত থেকে মেধাবী ছাত্র ছাত্রী এখানে আসতে শুরু করে । উচ্চ শিক্ষার মান ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে  ২০০৮ এ এখান থেকে ডিপ্লোমা কোর্সটিকে বন্ধ ঘোষণা করে গঠনতান্ত্রিক ভাবে একে টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির আদলে উন্নিত করা হয় ।  কলেজটি বর্তমানে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।  দেশের সকল ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ একটি স্বপ্নময় প্রতিষ্ঠানের নাম । আক্ষরিক ও বাস্তবিক উভয় দিক দিয়েই টেক্সটাইল টেকনোলোজির মান সম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির পরই পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অবস্থান সর্বজনগ্রাহ্য ।  ছাত্ররা বুটেক্স এর পর যদি দ্বিতীয় কোন টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করে তবে সেটি  পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ।  উন্নতির পরিক্রমায় স্বাভাবিকভাবে ভবিষ্যতে এখানে এম এস সি কোর্স চালু হবে এবং কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরিত হবে এমনই  সবার প্রত্যাশা 

কিন্তু যখন এমন একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির পরিবর্তে অবনতির দিকে ধাবিত করার প্রচেষ্টা চলে তখন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে এক গভীর শঙ্কার সৃষ্টি হয়ে ।  অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল কিছু স্বার্থান্যশী মহল তাদের কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে এখানে পুনরায় দ্বিতীয় সিফটে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চালু করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । যারই ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ডিপ্লোমা কোর্স চালুর কার্যক্রম নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে ।

স্নাতক পর্যায়ের সম্মান পাওয়া একটা প্রতিষ্ঠানে যদি  একবার বন্ধ হয়ে যাওয়া ডিপ্লোমা কোর্সকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা  হয়  তাহলে যেমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি তার স্বকীয়তা,খ্যাতি নষ্ট হবে তেমনি মানের দিক দিয়ে দেশের মেধাবী বিজ্ঞানমনস্ক ছাত্রদের এখানে ভর্তি হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা বিরাজ করে ভবিষ্যতে সেগুলো আর থাকবে না । তাছাড়া স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শুধু পাঠদান আর পরিক্ষাগ্রহণের মধ্যে সিমাবদ্ধ নয় । গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন এর মুল লক্ষ্য । কিন্তু  দুটি কোর্সকে একসাথে চলমান রেখে কিভাবে লেখাপড়া ও গবেষণার মান অক্ষুণ্ণ থাকবে সেটা চিন্তার বিষয় । আর অবকাঠামোগত দিক দিয়ে যদি দেখা যায় তাহলে দুই কোর্স মিলে যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে তাতে পরীক্ষাগার,পাঠাগারের শৃঙ্খলা ও শেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে বাধ্য  এছাড়াও একসাথে বি এস সি এবং ডিপ্লোমা দুটি ধারা থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে  একটা মনস্তাত্ত্বিক দন্দের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক ।  কেননা বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় মেধাবীরা পড়তে আসে সেখানে যদি ডিপ্লোমা শুরু হয় তবে ঐ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মহল থেকে অবজ্ঞা সূচক প্রশ্নের সম্মক্ষিন হতে হবে এতে করে তাদের নিজেদের মধ্যে একধরণের হীনমন্যতার সৃষ্টি হবে ।

বিশ্বে টেক্সটাইল পোশাক তৈরিতে বাংলাদেশের ক্ষমতা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত । প্রতিযোগিতা মুলক বিশ্ববাজারে  বাংলাদেশের  এই অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে যোগ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের কোন বিকল্প নেই । বর্তমান সরকারের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িক্তপ্রাপ্ত মন্ত্রীমহোদয়গন বিভিন্ন সময়ে  পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার অঙ্গীকার করেছেন । সেখানে আবার ডিপ্লোমা কোর্সকে ফিরিয়ে আনা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেবে ।

বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রাযুক্তিক অভিঘাতে শিল্পায়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে প্রস্তাবিত এই ডিপ্লোমা কোর্স চালু না করে অচিরেই পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান করার অঙ্গীকারকে বাস্তব রূপদান করা শুধু কলেজের শিক্ষার্থীদেরই নয় সমগ্র পাবনা বাসীর প্রানের দাবী ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

দর্শক সংখ্যা

বিজ্ঞাপন

যোগাযোগ Amitptec6th@gmail.com

সতর্কবার্তা

বিনা অনুমতিতে টেক্সটাইল ম্যানিয়ার - কন্টেন্ট ব্যাবহার করা আইনগত অপরাধ,যেকোন ধরণের কপি পেস্ট কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং কপিরাইট আইনে বিচারযোগ্য !