স্বাগতম

মোদের গরব, মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা |পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষী মানুষের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই!

টেক্সটাইল বাণিজ্যের চালচিত্র(Scenario Of Textile Trade)


Scenario Of Textile Trade

সময়ের সাথে সাথে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে বিশ্বায়ন,আসছে পরিবর্তন ।  শিল্প ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও দ্রুত।  শিল্পায়ন দেশের মানচিত্র ছাড়িয়ে বিশ্ব মানচিত্রের আদ্যপান্ত দখল করেছে অনেক আগেই।  টেক্সটাইল শিল্পও এর বাইরে নয় ।  আজকের সময়ে দাড়িয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন ভাবে বিশ্বায়নের ছোঁয়া লেগেছে  যে তার কাছে টেক্সটাইল শিল্পকে খুব ছোট মনে হয় কাঁচামালের সহজলভ্যতা বা প্রযুক্তি নয় টেক্সটাইল শিল্পকে নিয়ন্ত্রন করছে এখন আউটসোর্সিং ও বাণিজ্য নীতি ।  এর নেপথ্যের কারন বিশ্বায়ন।  পৃথিবীর মোট রপ্তানি বাণিজ্যের ৫.৭% বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের দখলে।  ২০২০ এ যার পরিমাণ দাঁড়াবে এক ট্রিলিয়ন ডলারে ।  বিশ্বের যেকোন প্রান্তে বসে পছন্দের যেকোন মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।  


সাম্প্রতিক  টেক্সটাইল বাণিজ্য চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কয়েকটি অগ্রসর অর্থনীতির দেশ যেমন অ্যামেরিকা,ইউরোপ,জাপান,অস্ত্রেলিয়া টেক্সটাইল পন্যের প্রধান ক্রেতা বা আমদানিকারক।  নিজ দেশে পোশাক উৎপাদন করা থেকে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে তারা বেশি আগ্রহী  ।  মূলত এই কয়েকটি উন্নত দেশে বস্ত্রের জোগান দেয়ার মাধ্যমেই টেক্সটাইল ব্যাবসার মূল স্রোত গতিশীল  তারাই বর্তমানে টেক্সটাইল বাণিজ্যের মূল চালকের আসনে বসে আছে

অপরদিকে এই টেক্সটাইল সামগ্রীর উৎপাদক দেশের তালিকায় রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো   কারন অন্য শিল্প অপেক্ষায় টেক্সটাইল শিল্প তুলনামূলক সহজ  , উন্নয়নশীল দেশ তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সস্তা জনশক্তির উপড় ভর করে সহজেই টেক্সটাইল বাণিজ্যে লাভবান হতে পারছে।   উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থনীতি তাই ক্রমশ টেক্সটাইল নির্ভর হয়ে উঠছে  এ শিল্প থেকে তারা বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সাথে সাথে নিজ দেশের বেকার সমস্যা নিরসন করতে পারছে  উদাহরণ হিসেবে দুটি দেশের নাম উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এমন দুটি উন্নয়নশীল দেশ যাদের প্রধান শিল্প এখন টেক্সটাইল।

টেক্সটাইল বাণিজ্যে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নঃ
অ্যামেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সিংহভাগ টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি হয় ।  ২০০৮ সালে যে আর্থিক মন্দার শুরু হয়েছিল তার কারনে দুটি দেশের অর্থনীতিই কম বেশি ক্ষতির সম্মখিন হয়েছে।  একারনে তারা চেষ্টা করছে কীভাবে আরও সস্তায় টেক্সটাইল পণ্য পেতে পারে । যার ফলশ্রুতিতে এই দুই দেশ তাদের মনোনীত কিছু দেশকে টেক্সটাইল বাণিজ্যে উন্নতি করার সুযোগ করে দিয়েছে ।  যেমন আফ্রিকান গ্রোথ ও অপর্চোনীটি অ্যাক্ট(অ্যাগোয়া)নামের যে চুক্তিটি ২০০০ সালে স্বাক্ষরীত হয় তাতে আফ্রিকান দেশগুলো পূর্বের থেকে কম মূল্যে তাদের কাঁচামাল পাচ্ছেএই আইন বা চুক্তি অনুযায়ী আফ্রিকান দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে ও আমেরিকার সাথে শুল্কমুক্ত ব্যাবসা করার অনুমতি পায়।  আফ্রিকা থেকে এখন যে সব পণ্য অ্যামেরিকায় রপ্তানি হয় তার বেশিরভাগই এই আইনের আওতায় হয়ে থাকে।  

তাই অ্যামেরিকার আমদানিকারকরাও আগের থেকে কম মূল্যে তৈরি পোশাক পেতে সক্ষম হচ্ছেন  নাইজেরিয়া,সাউথআফ্রিকা,কঙ্গো ছাদ ও অ্যাঙ্গোলার মত দেশ এই চুক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।

ভারত ও চীনঃ
যে দুটি দেশের ভূমিকা টেক্সটাইল বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন তাদের নাম ভারত ও চীন যদিও বিশ্ব টেক্সটাইল বলা হয় কিন্তু বাস্তবিকভাবে শুধু এই দুটি দেশের অংশগ্রহণের উপড় টেক্সটাইল শিল্প দারুণ ভাবে নির্ভরশীল । কাঁচামাল বা তৈরি পোশাক উৎপাদন দুদিক দিয়েই এই দুটি দেশের অবস্থান সবার শীর্ষে।  তুলা,পাট ও সিল্ক উৎপাদনে এই দুটি দেশ প্রথম ও দ্বিতীয় চীন ও ভারতের গড় তূলা উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ১৩০৬ ও ৪৮১ কেজি/হেক্টর ।  চীনের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত একটি রিপোর্টে দেখা গেছে চীনের গ্রামীন জনগোস্টির এক সপ্তমাংশ মানুষ তূলা চাষের সাথে যুক্ত, অন্যদিকে ২০১২-২০১৩ মৌসুমে বাইরের দেশে ১৭০ কেজি ওজনের প্রায় ৭০ লক্ষ্য বেল রপ্তানি করে ভারত

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিঃ
প্রত্যেক দেশেরই নিজেস্ব কিছু ব্যাবসা নীতি থাকেলেও বর্তমানে মুক্ত বাজার অর্থনীতি গুরুত্বের তালিকায় উপড়ে উঠে এসেছে ।  যেসব দেশ এই মুক্ত বাজার অর্থনীতির মধ্যে থাকে সেখানকার আমদানি ও রপ্তানিকারকরা কোন অতিরিক্ত কর ছাড়া নিজেদের মধ্যে পন্যের আদান প্রদান করার সুবিধা পা এরকম চুক্তি অনেক দেশের অর্থনীতিতেই ইতিবাচক বলে প্রমানিত হয়েছে ।  তবে মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার মধ্যে অবশ্যই কিছু নিয়ম ও শর্তাবলী আরোপিত থাকে যে অনুযায়ী দেশগুলো নিজেদের মধ্যে লাভ্যাংশের  ভাগাভাগি করে নেয় ।  মুক্ত বাজার ব্যাবস্থা অনেকাংশে আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপড় নির্ভর করে একারনে চুক্তিগুলো সর্বদা বেশ আলোচনার কেন্দ্রে থাকে প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বমুলক ব্যাবসা চুক্তি(মাল্টি ফাইবার এগ্রিমেন্ট) অতীতে অনেক তর্ক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।  এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা,কানাডা,অস্ত্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ডের মত উন্নত দেশের সাথে ভিয়েত্নাম,বাংলাদেশ,মেক্সিকো,ব্রুনাই এর মত উন্নয়নশীল দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।  চুক্তিটি বিশ্বের অর্থনীতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে এক যারা এই চুক্তিকে সমর্থন করে এবং অন্য দিকে যারা এই চুক্তির বিরোধিতা করে।  অনুরুপ চুক্তি যেমন দক্ষিন অ্যামেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট(নাফটা) , আশিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট উল্লেখযোগ্য।

নাফটা চুক্তির কারনে আমেরিকা,কানাডা ও মেক্সিকো এই তিনটি দেশ পরস্পরের মধ্যে কোন বীধিনিষেধ ব্যাতিত ব্যাবসা করতে শুরু করে অ্যামেরিকায় শ্রম বাজার ব্যায়বহুল থাকায় সেখান থেকে তূলা মেক্সিকো তে পাঠানো হয় ,সেখানে সস্তায় পোশাক তৈরি করে পুনরায় অ্যামেরিকায় পাঠানোর জন্য।  আশিয়ান অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো মধ্যে অনুরুপ চুক্তি ঐ দেশগুলোকে ব্যাবসাবান্ধব স্বতন্ত্র গোস্টিতে পরিনত করে ।

তবে এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে এই চুক্তির সুফল শুধু সেই সব দেশই পাবে যারা এই চুক্তির ভিত্তিতে ব্যাবসা করতে রাজি হবে বা সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থানে থাকবে।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরস্পরের মধ্যে আরও বেশি সমঝোতায় পৌছানো দুটি দেশই বেশি লাভবান হয়েছে ।  আরও অনেক ছোট বড় চুক্তি বিশ্ব টেক্সটাইলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে ।  ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা দেখতে পাই কোন পোশাক সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই কয়েকটি দেশের সীমারেখা পার করে ফেলে বিশ্বায়ন,যাতায়াত ও যোগাযোগের যে আধুনিকতম মাধ্যম তৈরি হয়েছে তার থেকেও টেক্সটাইল শিল্প অনেক দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।  এই চুক্তিভিত্তিক বাণিজ্য কাজ কর্মের চর্চা টেক্সটাইল শিল্পকে অসংখ্যভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।  কাঁচামাল কোথায় উৎপাদিত হবে , কোথায় পোশাকটির উৎপাদনের কাজ হবে,কোথায় বিক্রি হবে এসবই এখন চুক্তির উপড় নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

আজকে আমরা টেক্সটাইল শিল্প মানচিত্রকে যে রুপে প্রত্যক্ষ করছি তেমনটি না হয়ে অন্যরকমও হতে পারত যদি না এরুপ চুক্তি গুলো তৈরি হত।

টেক্সটাইল শিল্প ও বাণিজ্য সব দৃষ্টিকোন থেকেই মানব সমাজের একটি অতীভগুরুত্ববহ বিষয় । এই শিল্প একটি দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বেকারতত্বের সমস্যার সমাধান করে ।  যে শিল্পের অগ্রগতির পথে বাণিজ্য চুক্তির ভূমিকা সবথেকে বেশি ।  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

দর্শক সংখ্যা

বিজ্ঞাপন

যোগাযোগ Amitptec6th@gmail.com

সতর্কবার্তা

বিনা অনুমতিতে টেক্সটাইল ম্যানিয়ার - কন্টেন্ট ব্যাবহার করা আইনগত অপরাধ,যেকোন ধরণের কপি পেস্ট কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং কপিরাইট আইনে বিচারযোগ্য !