অপটিকাল
ব্রাইটেনিং এজেন্ট একটি বর্ণহীন বা দুর্বলভাবে হলুদ জৈব যৌগ যাকে কোন কিছুতে
ব্যাবহার করলে তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এর সহায়তায় কোন পদার্থ সূর্যরশ্মি থেকে অতিবেগুনী
রশ্মি শোষণ করে এবং শোষণকৃত আলোক শক্তিকে অপেক্ষাকৃত বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নীল বা
বাদামী আলো হিসেবে বিকিরণ করে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা ডিটারজেন্টে অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট এর ব্যাবহার সবচেয়ে
বেশি , যা ধোঁয়ার পর কাপড়ের উজ্জ্বলতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। প্রধানত তুলাজাত কাপড়ে অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট এর
ব্যাবহার বেশি।
তবে শুধু উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিই নয়, স্কাওয়ারিং,ব্লিচিং প্রক্রিয়ার প্রতিনিধি রুপেও একে ব্যাবহার করা যায় ।
তবে শুধু উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিই নয়, স্কাওয়ারিং,ব্লিচিং প্রক্রিয়ার প্রতিনিধি রুপেও একে ব্যাবহার করা যায় ।
প্রাকৃতিক
ফাইবারে অপদ্রব্য হিসেবে যে প্রাকৃতিক পিগমেন্ট থাকে তার কারনে এ সমস্ত ফাইবার
সূর্যালোক থেকে নীলাভ রশ্মি শুষে নিয়ে হলুদ বর্ণে রুপ নেয়। যা কিনা কাপড়ের সৌন্দর্যকে নষ্টের একটি
কারন। সিন্থেটিক ফাইবারের ক্ষেত্রে এই প্রভাব ততটা প্রগাড় নয়। এই হলুদ ভাব দূর করে পুনরায় তাকে সাদা ও
উজ্জ্বল করতে অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্টের ব্যাবহার তাই অনিবার্য । অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্টকে অপটিকাল
ব্রাইটেনার,ফ্লুরেসেন্ট ব্রাইটেনিং এজেন্ট অথবা ফ্লুরেসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্টও
সম্বোধন করা হয়।
অপটিকাল
ব্রাইটেনিং এজেন্ট টেক্সটাইল কাপড়ে গিয়ে তাতে মানুষের চোখে অদৃশ্যমান সূর্য থেকে বিকিরিত
অতিবেগুনী তড়িৎচৌম্বকীয় রশ্মি শোষণ করে যাদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৩০০ থেকে ৪০০ ন্যানো
মিটার এবং সেই কাপড় যখন সেই শোষিত শক্তি বিকিরণ করতে শুরু করে তখন তার তাপমাত্রা
সূর্যালোকের তুলনায় কম থাকে । ভিয়েনের সরন
সূত্র থেকে আমরা জানি তাপমাত্রার সাথে বিকিরিত শক্তি ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
এজন্য কাপড় থেকে বিকীর্ণ শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য
বেড়ে ৪০০-৫০০ ন্যানোমিটারে পৌছায়। এই
তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারনে বিকীর্ণ শক্তি বাদামী অথবা বিশুদ্ধ নীল আলো রুপে বাইরে বের
হয়।
তূলা
বা পলিয়েস্টার জাঁত কাপড় তৈরির সময়ই ব্রাইটেনিং এজেন্ট এর ব্যাবহার করা হয়। তৈরির পরে যখন রং দেয়া হয় তখন তার উজ্জ্বলতা আরও
বাড়ে । এছাড়াও বাজারে
বিক্রি হওয়া ওয়াশিং এজেন্ট ও ডিটারজেন্টে পরিমাণমত অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট দেয়া
থাকে তাই এগুলো দিয়ে কাপড় কাঁচলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বা সাদাভাব অনেকগুনে বেড়ে যায়।
তবে
ডাইং করা কাপড়ের উপড় অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্টের কিছু আলোক রাসায়নিক প্রভাব রয়েছে
। যা কাপড়ের লাইট ফাস্টনেস কমিয়ে দিতে
পারে। দেখা গেছে সাধারণ
উলের থেকে ব্রাইটেনিং এজেন্ট দ্বারা সাদা করা উল আলোর উপস্থিতিতে তাড়াতাড়ি হলুদ
হয়ে যায় । এর পেছনেও
আলোক তড়িৎ পদ্ধতিই কাজ করে ।
অপটিকাল
ব্রাইটেনিং এজেন্টের অপর নাম ফিজিক্যাল
ব্লিচিং এজেন্ট । সাধারণ ব্লিচিং প্রক্রিয়াতে আমরা জারক বা বিজারক যৌগের ব্যাবহার
করি যেমন পানি , সোডিয়াম পারক্লোরেট ইত্যাদি। ব্লিচিং এজেন্ট ফাইবারের অভ্যন্তরে গিয়ে প্রাকৃতিক বা কৃত্তিম রঞ্জক পদার্থকে ধ্বংস করে দিয়ে
সংশ্লিষ্ট ফাইবারকে অধিকতর সাদা করে । ব্লিচিং এ যে জারণ বা বিজারন ঘটে তা
অবশ্যই রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্তর্গত, সেকারনে এদের রাসায়নিক ব্লিচিং এজেন্টও বলা
যায় । অপরদিকে অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্টের কাজের সাথে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার
সম্পৃক্ততা থাকে না , এগুলো কাজ করে সম্পূর্ণ বাহ্যিক ভাবে, আলোক রশ্মি শোষণ ও
বিকিরণের মাধ্যমে। তাই এরুপ নামকরণ করা হয় ।
যেভাবে অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট কাজ করেঃ
ফ্লুরেসেন্স
ব্রাইটেনিং এজেন্ট এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট যৌগের
ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো কে দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতে পরিণত করার ক্ষমতার উপড়
। ফ্লুরেসেন্ট যৌগ থাকা অবস্থায় কাপড় তার
তলে আপতিত হওয়া সারাদিনের সূর্যরশ্মি থেকেও বেশি পরিমাণ আলো বিকিরণ করে । যা
কাপড়টিকে চমৎকার সাদা রুপে আবির্ভূত করে। তবে এই প্রভাব কেবল তখনই সম্ভব যখন আপতিত সূর্যরশ্মিতে
অতিবেগুনী রশ্মি উপস্থিত থাকবে ।
মানুষের
চোখ ৪০০-৭০০ ন্যানো মিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোতে সাড়া দেয় অর্থাৎ দেখতে পায়
। অপটিকাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট সাধারণ এই
দৃশ্যমান আলোকে শোষণ করে না তবে শোষণ করে অদৃশ্য অতিবেগুনী রশ্মি এবং তাকে নীল
ফ্লুরেসেন্স ৪৩০-৪৫০ ন্যানো মিটারের আলোরুপে নিঃসৃত করে। এক কথায় অপটিকাল
ব্রাইটেনিং এজেন্ট অদৃশ্যমান আলোকে দৃশ্যমান আলোতে পরিণত করে বলেই তাকে উজ্জ্বল
দেখায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন