সমস্যা যেখানে থাকবে সমাধানও সেখানে আসতে বাধ্য । শিল্পে কোন কিছুই থেমে থাকে না । বিজ্ঞান আর শিল্প এমনই দুটো ক্ষেত্র যেটা আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টিকর্তা মনে হতে পারে কিন্তু গভীরে চিন্তা করলে দেখা যায় এখানে যেই সমস্যার সৃষ্টি করে সেই সমাধানকারী । সমস্যা আর সমাধান এই দুটো বিষয় না থাকলে কখনই মানব সভ্যতা এগোতো না ।
ওয়েট প্রোসেসিং এর সাধারণ মাধ্যম
পানি। সাধারণত ওয়েট প্রোসেসিং এর বিভিন্ন পর্যায়ে কাপড়ের সাথে পানির স্পর্শ ঘটে। কাপড়কে
পানিতে মিস্রিত ডাই রসায়নে নিমজ্জিত করা হয় । যাতে কাপড়ের ওজোন ৭০-১০০ ভাগ বেড়ে যায়
। পরে কাপড়কে রোলারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে তরলকে আবার বের করে নেয়ার ব্যাবস্থা করা
হয়। সবশেষে ওভেন বা চুল্লীর সাহায্য কাপড়কে পুরোপুরিভাবে শুকানো হয়।রোলারে পানিকে
বের করা ও চুল্লীতে বাষ্পীভবন করতে কাপড়ের পানিকে দূর করতে বিপুল পরিমাণ শক্তির ব্যায়
হয়। দেখা গেছে পুরো ওয়েট প্রোসেসিং খরচের ১৮% এখানেই চলে যায় । সাধরন পদ্ধতির
প্যাডিং যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রতি ১০০ গ্রাম কাপড় থেকে গড়ে ৫০-৬৫ গ্রাম পানি অপসারণ
করতে হয় । যেখানে প্রতি কেজি পানি অপসারণে দরকার হয় ১.৬ কেজি বাস্পশক্তির ।
এখানেই
শেষ নয় ডাই রসায়ন দিয়ে কাপড়কে সিক্ত করার পদ্ধতির সাথে উচ্চ মাত্রার পানি অপসারণ
কৌশল যুক্ত থাকলে যে বিশাল আয়তনের দূষিত পানি বের হয় তাকে বিশুদ্ধ করে পুনরায়
ব্যাবহার উপযোগী করা অনিবার্য হয়ে পরে। নতুবা পানির সংকট ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা
ভয়াবহ রুপ লাভ করবে। তবে এখানেও পানির মধ্যে থাকা দূষিত পদার্থ দিয়ে পরিবেশ দূষণ
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়া প্রয়োগিত রসায়নের এক বা একাধিক উপাদানের উপড় কাপড়ের
শোষণের মাত্রার আধিক্যের কারনে পরে ঐ বিশুদ্ধকরা পানি দিয়ে আবার দ্রবণ তৈরি কঠিন
হয়। তাই সামগ্রিক আলোচনায় এ বিশাল খরচ কমানো তথা দূষণ ঠেকাতে একমাত্র পথ হল মাধ্যম
হিসেবে পানি ব্যাবহারের পরিমাণ কমানো । এ লক্ষ্যে
নতুন কিছু পদ্ধতি এসেছে যেমন লো ওয়েট পিক আপ ফিনিশিং ও ফোম ফিনিশিং ।
লো ওয়েট পিক আপ ফিনিশিং এর
শর্ত হল নুন্যতম পরিমাণ রসায়নের ব্যাবহার করা। অর্থাৎ যতটুক রসায়ন দিয়ে কাপড়কে
সিক্ত করলে পরবর্তীতে তাকে আর অপসারন করার দরকার হবে না ঠিক ততটুকু দিয়েই কাজ করা।
তবে এই পথে কাজ করার প্রধান সমস্যা হল বড় আয়তনের কাপড়ে অল্প পরিমাণ দ্রবণের সুষম
বণ্টন নিশ্চিত করা কঠিন। এ সমস্যা প্রকট হয় যখন তূলার মত পানিশোষী কাপড় নিয়ে কাজ
করা হয়।
এখানেই ফোম ফিনিশিং এর সার্থকতা কারণ ফোম ফিনিশিং
এ যেমন নুন্ন্যতম পানির ব্যাবহার হয় তেমনই অল্প পানির সাহায্যেই কাপড়ে রসায়নের সুষম
বণ্টনও সম্ভব হয়। কীভাবে আসুন দেখা যাক । এখানে স্বাভাবিকের থেকে আরও বেশি ঘনীভূত মিশ্রণ
নিয়ে কাজ করা হয় এবং তাকে ফেনার আকারে কাপড়ে ফেলা হয়,যাতে পানির পরিবর্তে ডিস্পার্সিং
মাধ্যম হিসেবে কাজ করে । ফেনাকরনের জন্য দ্রবনের আয়তনে প্রচুর বৃদ্ধি ঘটে(৫ থেকে ২০
গুন)। তাই কাপড়ের পুরো আয়তনে তার সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। যেহেতু পানির পরিমাণ কম তাই
বাষ্পীভবনের প্রয়োজনও কম । খুব স্বাভাবিক কারনেই কাপড়কে শুকানোর জন্য কম শক্তির প্রয়োজন
হয়।কারণ অপসারণ করার জন্য বাড়তি পানিই কাপড়ে থাকে না ।
বিশুদ্ধ পানিতে ফেনা তৈরি করতে হয় না। ফেনার
জন্য সার্ফেস এক্টিভ এজেন্টের প্রয়োজন যা বাতাসের সাথে পানির ক্রিয়াকে প্রচন্ড গতিতে
বাড়িয়ে দেয়। এই প্রণালিতে একটি জলীয় দ্রবণ
ফেনার জন্ম দেবে। এই সম্পৃক্ত মিশ্রণকে বাতাসের সাথে মিলিতকরণে তরলে পূর্ণ একটি সম্পৃক্ত
ফেনার উৎপন্ন হবে যাকে ডিস্পার্স মাধ্যম বলা হবে।
সার্ফেস এক্টিভ এজেন্ট ফেনার তৈরির জন্য খুবই
উপযোগী , রৈখিক অ্যালকালাইন ডেরিভেটিভ যেমন সোডিয়াম লোরাল সালফেট এর মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী
মাধ্যম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন