কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত
নেটওয়ার্কের সাহায্যে চলা যে কোন প্রকার অর্থনৈতিক কাজকে ই-কমার্স বলে ।
ই-কমার্সের গতিশীলতা প্রবলভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্শন করেছে । এখন শহুরে জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে ই-কমার্স । যদিও দু দশক আগে ই-কমার্স ধারনা কল্পনাতীত ছিল । ইলেকট্রনিক কমার্স , সাধারণ ভাবে যাকে e-commerce বা
eCommerce লেখা হয় । সহজ কথায় ইন্টারনেট ব্যাবহার করে কোন প্রোডাক্টের ক্রয় বিক্রয় এবং এ সম্পর্কিত
পরিসেবার মান সহজীকরণ হল ই-কমার্স
মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক ফান্ড
ট্র্যান্সফার, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারনেট বিপণন , অনলাইন ট্রান্সসেকশন
প্রসেসিং , ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ, ঈনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং
স্বয়ংক্রিয় তথ্য সংগ্রহের সিস্টেম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইলেক্ট্রনিক
কমার্সের যাত্রা ।
ই-কমার্সের মানচিত্রঃ-
মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে ২০১০
সালে, যুক্তরাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে
বড় ই-কমার্সের বাজার ।
২০১৩ সালে, ইউরোপীয় দেশগুলোর
মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রে সবচেয়ে
বেশি ই-কমার্সের লেনদেন হত । বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির মোট টার্ন ওভারের এক চতুর্থাংশ
ই অনলাইন চ্যানেল থেকে আসছে ।
আমেরিকানদের কাছে ই-কমার্স দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য
অংশে পরিনত হয়েছে । অনলাইনে বিল পরিষোদ এবং অনলাইন শপিং আমেরিকানদের ই-কমার্স
ব্যাবহারের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র ।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ চীন-এ ই-কমার্সের বাজার প্রতিবছর লাফিয়ে লাফিয়ে
বেড়ে চলেছে । দেশটিতে প্রায় ৭০ কোটি ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী রয়েছে । ২০১৫ সালের
প্রথম দিকে চীনে অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণ ছিল ২৫৩ বিলিয়ন ডলার । অনলাইনে কেনাকাটার দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করতে চীনের
বিক্রেতারা অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছেন
। যার ফলশ্রুতিতে চীনের মোট খুচরা কেনাকাটার
১০ শতাংশই এখন অনলাইনে হচ্ছে ।
ই-কমার্সে চীনের বৈদেশিক
লেনদেনের পরিমাণ বিগত চার বছরে ৩২% বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে ২.৩ ট্রিলিয়ন চাইনিজ
মুদ্রায় পৌঁছেছে যা ৩৭৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান ।
অনলাইনের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের
৯.৬ % চীনের অবদান । চীনের বিখ্যাত অনলাইন মার্কেটের নাম আলি বাবা। চীনের সমগ্র অনলাইন মার্কেটের ৮০%
মালিক আলি বাবা ।
ব্রাজিলের ই-কমার্স ২০১৩ সাল থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং
২০১৭ নাগাদ ১৭.৩ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিনত হবে বলে আশা করা হচ্ছে । ব্রিটিশ অর্থনীতির ১৫% এখন ই-কমার্সের দখলে।
ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের
সংখ্যার ভিত্তিতে ভারত বিশ্বে তৃতীয় ।
যদিও ইন্টারনেটে অনুপ্রবেশের পরিমাণ ভারতে এখনও অনেক কম । অনলাইন শপিং এর সূচনা
লগ্নে রয়েছে এখন ভারত । তবে বিপুল সংখ্যার ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী থাকায় , খুব তাড়াতাড়ি অনলাইন সপিং এই দেশে প্রসারিত হবে আশা করা
হচ্ছে ।
কাস্টমার তৈরি করতে ভিন্ন ধাঁচে তৈরি হচ্ছে ভারতের শপিং ওয়েবসাইটগুলোর বিজ্ঞাপন
অনলাইন
মেগাস্টোরঃ
নব্বই দশকের মধ্যে ইন্টারনেট
বাণিজ্যে কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে । অ্যামাজন বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ।
১৯৯৫ সালে একটি অনলাইন বইয়ের
দোকান হিসেবে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল । ইট ,বালু , সিমেন্টের তৈরি অগণিত দোকান থাকলেও
তখন অ্যামাজনই ছিল অনলাইন ব্যাবসা করা একমাত্র দোকান । অ্যামাজন ই প্রথম শারীরিক
বা স্থানের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে একজন ক্রেতাকে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে
স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানার ও কেনার সুবিধা প্রদান করে ।
ডিভিডি,সিডি,MP3 Download, কম্পিউটার
সফটওয়্যার,ভিডিও গেমস, ইলেক্ট্রনিক
সামগ্রী, পোশাক , ফার্নিচার, খাবার
নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল কিছুই এখন অ্যামাজন থেকে কেনা যায় ।
অনলাইন ব্যাবসার অনন্য উদাহরণ অ্যামাজনই
প্রথম প্রোডাক্ট সম্পর্কে ক্রেতাকে মূল্যায়ন করার সুযোগ দেয় । একজন ক্রেতা প্রোডাক্টকে
নাম্বার দিয়ে রেটিং করতে পারেন । বর্তমানে অন্য সব অনলাইন সপ এই রেটিং পদ্ধতি গ্রহণ
করছে । অ্যামেরিকার মধ্যে প্রায় ৬৫ মিলিওন মানুষ অ্যামাজনের
নিয়মিত ক্রেতা। ২০১০ সালে শুধু অ্যামেরিকা থেকে অ্যামাজন ৩৪.২৪০ বিলিয়ন ডলার আয়
করে নেয় । ২০০১ অ্যামাজন ডট কম তাদের মোবাইল ভার্সন ওয়েবসাইট চালু করেছিল ।
অনলাইন কেনাকাটার জগতে আরেকটি
বড় সাফল্যের নাম ebay , ebay প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে । Zappos,Victoria Secret আরও দুটি উল্লেখযোগ্য অনলাইন
শপিং ওয়েবসাইটের নাম ।
ইয়াহু প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে , এরপর গুগোল প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৯৮ সালে । অ্যামেরিকার
এ প্রধান দুটি সার্স ইঞ্জিন পরে গুগল শপিং ও ইয়াহু অকশন নামের দুটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ।
গ্লোবাল ই-কমার্স কোম্পানি
Paypal ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে , যা কিনা বর্তমানে ১৯০ টি দেশে চালু রয়েছে। কোম্পানির অধিকৃত ব্যাংকগুলো বিক্রেতাদের পেমেন্ট প্রদান
করে ।
বিশ্বের ২৪ টির বেশি মুদ্রায় Paypal এ
অর্থ জমা রাখা ও একাউন্ট করা যায় ।
Paypal এর ২৩২ মিলিয়ন একাউন্ট
রয়েছে, যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন একাউন্ট সক্রিয়ভাবে লেনদেন হয়।
Paypal এর গঠন , স্টোরেজ,
প্রচার ও নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে ২০০৪
সালে পেইমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি , সিকিউরিটি স্টান্ডার্ড কাউন্সিল তৈরি হয় ।
২০১৪ সালে বিভিন্ন কাজে সারা
বিশ্বে মোবাইলে ফোনে পেমেন্ট হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৩০ বিলিয়ন ডলার। সহজ ইন্টারনেট
ডিফাইজ ট্যাবলেট ও মোবাইল প্রচলন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় , ই-কমার্স ব্যাবহারের একটি বৃহত্তম ভোক্তা শ্রেণী তৈরি হচ্ছে । তাই
ই-কমার্স বাজারের ভবিষ্যত খুবই সুনিশ্চিত । যেহেতু প্রতিনিয়ত বেশি বেশি মানুষ
ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হচ্ছে , তাই লেনদেন বা যোগাযোগের সুবিধার কাছে প্রয়োজন গৌণ
মনে হচ্ছে ।
ভবিষ্যতের মানুষ হয়ত
ইলেকট্রনিক মাধ্যম থেকেই তাদের বেশিরভাগ কেনাকাটার কাজ করবে । বিভিন্ন সোশ্যাল
মিডিয়ার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে , তাই ব্যাবসা ও মানুষের মধ্যে কথোপকথনের পরিমাণও
বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে মোবাইল ই-কমার্স নতুন নতুন
ব্যাবহারের পথ উদ্ভাবন করবে আশা করা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন